নদনদীর পানি না কমায় সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে। এছাড়া দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে একটি বাজারসহ কয়েকটি রাস্তা। অন্যদিকে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, ঝালকাঠির রাজাপুর
ও নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতবাড়ি, হাটবাজার, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চোখের সামনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অনেকে পথে বসেছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের দাবি, ত্রাণ নয়- অবিলম্বে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সিরাজগঞ্জ :যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২১৬ গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা নিজ নিজ চেষ্টায় পাউবোর বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের মানুষ বন্যায় ইতোমধ্যে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং ৫টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজিপুরে ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং চৌহালীতে ১৫ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১০৬০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধা : নদনদীর পানি না কমায় গাইবান্ধায় বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্দশা বেড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে, রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল বলে জানান সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী। তার ইউনিয়নে ১৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। তিনি বলেন, বন্যার পানির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পাতিলাবাড়ি, নলছিয়া, গোবিন্দপুর, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, গুয়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামে ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে। অন্যদিকে যমুনায় বিলীন হয়েছে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়। হুমকিতে আশপাশের দু’শতাধিক বসতবাড়ি। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) :চিলমারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আকস্মিকভাবে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে রাস্তা ভেঙে উপজেলা শহরের সঙ্গে রানীগঞ্জ-কাঁচকোল এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বুধবার বিকেল থেকে আকস্মিকভাবে বুড়িতিস্তা দিয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলা সদর থেকে ঠগেরহাট হয়ে কাঁচকোল বাজার সড়কসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তা। রানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে আকস্মিকভাবে বুড়িতিস্তার পানি প্রবেশ করায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল : বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মানুষের মাঝে নদী ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে দুটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সদর ইউনিয়নই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।
হিজলা উপজেলা চত্বর সংলগ্ন মেঘনা নদীর শাখায় তীব্র ভাঙন ধরেছে। বিশেষ করে বাউশিয়া গ্রাম তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। পুরোনো হিজলা বন্দরের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক গত এক মাসে নদীতে বিলীন হয়েছে। সেখানকার নৌ টার্মিনাল সরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরোনো হিজলা বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোনের পতিত জমি, মধ্য বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
পাশের উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের রুকন্দি, সাদেকপুর, চাঁনপুর মেঘনার মোহনা ইলিশা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে।
রাজাপুর (ঝালকাঠি) : বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনের ফলে নদীতে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠির রাজাপুরের মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ইতোমধ্যে পূর্ব পাশের কয়েকটি কক্ষ ও বারান্দা বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় পুরো বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশেই জামে মসজিদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বাদুরতলা বাজারের অর্ধশত দোকান, বসতঘর ও গাছপালা কয়েকশ’ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে।
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) :কলমাকান্দা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ডোয়ারিয়াকোনা সর্বজনীন কবরস্থানটি হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে মেইন রাস্তা থেকে কবরস্থানে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৮ সালে চান্দুয়াইল গ্রামের তাহের আলী সর্বজনীন কবরস্থানের নামে ৪ একর জমি দান করেন। সম্প্রতি ১.৫ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কলমাকান্দা, ডোয়ারিয়াকোনা, চান্দুয়াইল, চাঁনপুর, বাদে আমতৈল, আনন্দপুর, বিশাড়া, চিনাহালা, শালজানসহ ১০-১৫টি গ্রামের একমাত্র ভরসা ওই কবরস্থানটি। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উব্দাখালী নদীর তীরবর্তী ডোয়ারিয়াকোনা গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।